Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব

 

মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াকুব শরীফ,  বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ

জন্ম-০৯ অক্টোবর ১৯২০ খ্রীষ্টাব্দঃ মৃত্যু- 

পিতা- আলহাজ্ব মাওলানা বশির উল্যাহ, গ্রাম-মইজদীপুর।

লেখাপড়া : সাদেকপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ম ও ২য় শ্রেণী, অর্জুনতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণী পাশ করে বেগমগঞ্জ উপজেলার মীর আহম্মদপুর সিনিয়র মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এই মাদ্রাসা থেকে হাপ্তুম শ্রেণীতে জামেয়া বৃত্তি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ২য় স্থান অর্জন করে মাসিক দুই টাকা হারে বৃত্তি লাভ করে। এক বছরের টাকা একত্রে ২৪ টাকা পেয়ে উন্নত শিক্ষা গ্রহনের জন্য কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। মাদ্রাসার জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে আরবী ও ইংরেজীতে প্রথম স্থান অর্জন করায় দু’টি বৃত্তি লাভ করেন। আরবীর জন্য হাজী মহসিন বৃত্তি দশ টাকা এবং ইংরেজীর জন্য বৃট্রিশ সরকারের বৃত্তি পাঁচ টাকা। কলিকাতা আন্দিরা মাদ্রাসা থেকেই ১৯৪১ সনে আলিম, ১৯৪৩ সনে ফাযিল এবং ১৯৪৫ সনে কামিল পাশ করেন। প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। এরপর সাধারন শিক্ষা গ্রহনের মানসে তৎকালীন যশোহর জেলার মাগুরা কলেজে আই এ ক্লাশে ভর্তি হন। এই কলেজে তাঁর সহপাঠি ছিলেন নোয়াখালী জেলার কৃতি সন্তান এডভোকেট আবদুল মালেক উকিল (সাবেক মন্ত্রী ও স্পীকার) মাগুরা কলেজ থেকে আই এ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজে অনার্স কোর্সে ভর্তি হন। এখানেও সাবসিডিয়ারী বিষয় রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ক্লাসে জনাব মালেক উকিল সহপাঠি হলেন। তিনি ১৯৪৯ সনে অনার্স এবং ১৯৫০ সনে এম, এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। মেধা সম্পন্ন ফলাফলের জন্য তাঁকে স্বর্ণপদক দেয়া হয় এবং কনভোকেশনে তৎকালীন গভর্নর ফিরোজ খান নুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসাবে স্বর্ণপদক পরিয়ে দেন।

কর্মজীবন : এম এ পাশ করার পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেছেন। হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক, মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট ও কলেজের প্রভাষক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৫৩ সনে ইপিসিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে যোগদান করেন । তিনি মাদ্রাসা ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষা প্রবর্তন করেন। পরবর্তিতে তিনি ঢাকা সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা এবং সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োজিত থাকেন। সরকারী চাকুরী বিধি মোতাবেক ১৯৮৫ সনে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করেন।

তাঁর রচিত ১০টি বই এবং অসংখ্য প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্রিকা ও প্রকাশনায় মুদ্রিত হয়েছে।

 

ডঃ এম আমিরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কৃষি বিজ্ঞানী

জন্ম : ০১ সেপ্টেম্বর ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ, মৃত্যু : ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ

পিতা- মৌলভী করিম বক্স মিয়া ( সার্কেল পন্ডিত, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ সার্কেল), গ্রাম : অর্জুনতলা।

লেখাপড়া: ১৯৩৫ সনে বেগমগঞ্জ হাই স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪২ সনে রসায়ন শাস্ত্রে অনার্স সহ এম এস সি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ১৯৪৯ সনে আমেরিকার ক্যলিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়  থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনিই প্রথম মসলমান ছাত্র যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে প্রথম স্থান অর্জন করেন।

কর্মজীবন : তিনি ১৯৫০ সনে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন। পাকিস্তান কৃষি বিভাগের সর্বোচ্চ পদে পরিচালক হিসাবে পরবর্তীতে মৃত্তিকা জরিপ বিভাগে মহা পরিচালক ছিলেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে প্রায় দুই বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭০ সনে জয়দেবপুরে পূর্বপাকিস্তান ধান গবেষনা ইনিষ্টিটিউট স্থাপন করেন। এই প্রতিষ্ঠান বর্তমানে “ব্রি” (BRRI)নামে পরিচিত । এই গবেষনা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন তিনি নিজেই ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ভাবিত কয়েক জাতের ধান আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। ইরি নামে আমাদের দেশে পরিচিতি লাভ করেছে। ব্রি থেকে উদ্ভাবিত অনেক জাতের ধান এখনো ভারতে, মেক্সিকো এবং ভিয়েতনামে আবাদ হচ্ছে। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে জয়দেবপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনিষ্টিটিউট এর গবেষনাগার এর নাম তাঁর নামে রাখা হয়। ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ সন পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা কাউন্সিল (BARC)এর নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়াও FAO, UNDP, এবং সিরডাপ সহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থার গুরুত্বপূর্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার জন্য দেশ বিদেশে বিভিন্ন সংস্থা থেকে সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন।

 

ডাঃ টি.আই.এম নুরুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক এম,এল,এ

জন্ম : ২৬ শে ফেব্রুয়ারী ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দ    মৃত্যু : ৩০ অক্টোবর ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দ

পিতা : রিয়াজ উদ্দিন পাটোয়ারী, গ্রাম : চাঁচুয়া, অর্জুনতলা ইউনিয়ন।

তিনি ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতা ক্যাম্বেল মেডিকেল কলেজ থেকে স্বর্ণপদক নিয়ে এল.এম.এফ পাশ করেন। কোন সরকারী না নিয়ে তিনি আজীবন মানব সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি পঁচিশ বছর যাবত অর্জুনতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি সেনবাগ কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অর্জুনতলা ইউনিয়নের নাম পরিবর্তন করে ছিলোনিয়া ইউনিয়ন করার মানসে প্রতিষ্ঠা করেন ছিলোনিয়া বাজার, ছিলোনিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, ছিলোনিয়া বাজারে স্থাপন করেন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়।

যুক্তফ্রন্ট সরকারের সময় কৃষক প্রজা পার্টি থেকে মনোনয়ন নিয়ে সেনবাগ- কোম্পানীগঞ্জ এলাকা থেকে এম,এল,এ নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রিয় ভাজন ছিলেন। হ্যাংলা পাতলা, লম্বা গড়নের শরীর হওয়ায় বঙ্গবন্ধু তাঁকে “জিন্নাহ সাহেব” বলে ডাকতেন।

তিনি একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন  সময়ে তাঁর গ্রামের বাড়ীতেই স্থাপন করেন শিশু হাসপাতাল। তাঁর বাড়ি নিরাপদ এলাকায় থাকায় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করতেন। তিনি একজন নামকরা সার্জন ছিলেন। বুলেট বিদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের বুলেট বের করে এমনকি অঙ্গহানির মত বড় অপারেশনেও তিনি করেছেন।

দরিদ্র নিপীড়িত মানুষকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করে গেছেন সমগ্র জীবন ধরে।

 

চিত্তরঞ্জন সাহা

       চিত্তরঞ্জন সাহা ১৯২৭ সালের ১জানুয়ারী মোহাম্মদপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৪৩ সনে মোহাম্মদপুর রামেন্দ্র মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। কলিকাতা বঙ্গবাসী কলেজ থেকে ১৯৪৬ সনে আই,এ এবং চৌমুহনী কলেজ থেকে ১৯৪৮ সনে বি,এ পাশ করেন। বি,এ পাশ করে চৌমুহনী বাজারে ৬০ টাকা মাসিক ভাড়ায় বই বিক্রির জন্য একটি দোকান নেন। ১৯৫১ সনে পুথিঘর এর নামে প্রাথিমক বিদ্যালয়ের জন্য দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ১৯৫২ সনে প্রবেশিকা পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রকাশ করেন “টেষ্ট পেপারস মেড ইজি”।  ১৯৫৪ সনে বাসন্তী প্রেস ভাড়া নেন। ব্যবসার প্রসার লাভ করায় ঢাকার পাটুয়াটুলীতে ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এরপর ঢাকার প্যারিদাস রোডে ঢাকা প্রেস ও বাঁধাইঘর এবং চন্দ্র শেখর কাব্যভূষণ মহাশয়ের গ্রন্থনালয়কে নিয়ে সৃষ্টি করেন “পূঁথিঘর প্রাইভেট লিমিটেড” ।

১৯৭১ সন স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে স্বপরিবারে আগরতলায় চলে যান। সেখান থেকে ১০ মে কলিকাতায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অফিসে পৌছেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য কি করা যায় এই নিয়ে ৫০ জন কবি, সাহিত্যিক, সংস্কৃতি কর্মী এবং বুদ্ধিজীবিকে সৈয়দ আলী আহসানের পার্ক সার্কাসের বাসায় একত্র করেন। এদের মধ্যে ডঃ আনিসুজ্জামান, ডঃ সানজিদা খাতুন, সত্যেন সেন, ডঃ সরোয়ার মুরশিদ খান সহ অনেক আলোচনায় অংশ নেন।

সভায় সিদ্ধান্ত হয় মুক্তিযুদ্ধের কথা লিখার এবং প্রকাশনার দায়িত্ব নিলেন চিত্ত রঞ্জন সাহা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বই প্রকাশিত হবে বলে সকলে এর নাম ঠিক করলেন “মুক্তধারা”।  ৩২টি বই প্রকাশিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে বই মেলার উদ্যোগ গ্রহন করেন। এ যাবত “মুক্তধারা” থেকে প্রায় ৪০০০ বই প্রকাশিত হয়। বই এর জগতে এই মহান ব্যক্তি ২০০৭ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর পরলোক গমন করেন।

এই বরেণ্য ব্যক্তি বহু সম্মানে ভূষিত হন। নিম্নে কয়েকটি সম্মাননার কথা উল্লেখ করা হলো-

১. ২০০৫ সালে “একুশে পদক” শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য।

২. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ২০০৫ সালে “বিদ্যাসাগর পুরস্কার”

৩. ১৯৮৬ সালে “থিয়েটারের শ্রদ্ধাঞ্জলী সম্মাননা”

৪. ১৯৯৫ সালে “বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র” আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা

৫. ১৯৯৬ সালে “বনলতা সাহিত্য পুরস্কার”

৬. ১৯৯৭ সালে “সেরা প্রকাশক” স্বর্ণপদক

৭. ২০০৩ সালে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রতা সমিতির সম্মাননা।

৮. ২০০৮ সালে সেনবাগে প্রগতি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী কর্তৃক মরোনত্তর “প্রগতি পদক”